১৯৫৬ সালে The American Sex Revolution নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। লেখকের নাম Pitirim A. Sorokin (পিটিরিম সরোকিন)। রাশিয়ান বংশোদ্ভূত সরোকিন ছিলেন Harvard University-র সমাজবিজ্ঞান অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ভদ্রলোককে সমাজবিজ্ঞানে গত শতাব্দীর অন্যতম মহারথী মনে করা হয়।
সরোকিন তার এই বইতে মার্কিন সমাজ নিয়ে বেশ কিছু পূর্বাভাস দেন। খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে ঘোষণা করেন, অ্যামেরিকার সমাজ খুব দ্রুত নৈরাজ্যের মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আর এর প্রধান কারণ হবে, যৌনতার ব্যাপারে মার্কিন সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন। বই প্রকাশের বছরটা আবার খেয়াল করুন। ১৯৫৬। সরোকিন কথাগুলো বলেছিলেন অ্যামেরিকাতে যৌন বিপ্লব শুরু হরাব আগে। নিজের সমাজের ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেছিলেন,
“মার্কিন সমাজ যৌনতা নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে... আমাদের সংস্কৃতির প্রতিটি পর্যায় যৌনতা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে... যৌনতার ক্রমবর্ধমান জোয়ার আমাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে, ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে।” [পৃষ্ঠা:১৯]
সরোকিনের বিশ্বাস ছিল, মার্কিন সমাজ এমন এক যৌন বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে, যা সমাজের মূল্যবোধের কাঠামো আমূল বদলে দেবে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়বে পুরো সমাজের অস্তিত্ব। যৌন নৈরাজ্যের হাত ধরে আসবে সামাজিক ও রাজনৈতিক নৈরাজ্য। বাকিরা যখন স্বাধীনতা, প্রগতি আর অধিকারের বুলি আওড়াচ্ছিল, সেই সময়ে ঐতিহাসিক দূরত্বে দাঁড়িয়ে দিগন্তে গভীর বিপর্যয় দেখতে পেয়েছিলেন সরোকিন। মার্কিন জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছিলেন,
“যৌন নৈরাজ্যের প্রতি আমাদের প্রবণতা এখনো ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরিণতি তৈরি করেনি। তবে, এক মারাত্বক রোগের প্রথম উপসর্গগুলো এরই মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে।” [পৃষ্ঠা:১৩২-১৩৩]
মারাত্বক এই রোগের ফলাফল কী হতে পারে, তাও বিস্তারিত লিখেছিলেন সরোকিন। তার ধারণা ছিল, আসন্ন যৌন বিপ্লবের ফলে সমাজে চেইন রিয়্যাকশনের মতো কিছু ব্যাপার ঘটবে। প্রথমে, নারীর ক্ষমতায়নের নামে ঘর থেকে স্থায়ীভাবে বেড়িয়ে পড়বে গৃহিনীরা। তারপর তারা পরকীয়ায় জড়াবে। ধীরে ধীরে পোশাক শালীন থেকে অশালীন হতে থাকবে, ক্রমশ উন্মুক্ত হবে ঢেকে রাখা দেহগুলো।[পৃষ্ঠা:৯৫] বাড়বে বিবাহপূর্ব এবং বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতা। পরিবার দুর্বল হবে, ডিভোর্স বাড়বে। নারী পুরুষালী হয়ে উঠবে, আর পুরুষরা মেয়েলী হতে থাকবে। ধর্মহীনতা, অশ্লীলতা, পতিতাবৃত্তি বাড়বে। যৌনতার ব্যাপারে ‘উদার’ দৃষ্টিভঙ্গির হাত ধরে আসবে যৌন বিকৃতি। প্রথম দিকে অবক্ষয়ের প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেবে অভিজাত শ্রেণি। তারপর তা ছড়িয়ে পড়বে পুরো সমাজে। একসময় এগুলো সমাজের কাছে স্বাভাবিক মনে হতে শুরু করবে। [পৃষ্ঠা:১০০-১০১]
যৌনতা যত অবাধ হবে, ততই দুর্বল হবে সামাজিক মূল্যবোধ। ভোগবাদ, লাম্পট্য, কামুকতার প্রভাবে বিয়ে আর পরিবারের মতো ব্যাপারগুলো মানুষের কাছে বোঝা মনে হবে। নৈতিকতা আর মূল্যবোধকে মনে হবে অপ্রাসঙ্গিক বা আপেক্ষিক। আক্রান্ত হবে নারীত্ব, পুরুষত্ব, পিতৃত্ব আর মাতৃত্বের সংজ্ঞাও। খেয়ালখুশি মতো এগুলো বদলাতে চাইবে মানুষ।[পৃষ্ঠা:৮৯] একই ব্যাপার ঘটবে সম্মান, মর্যাদা, ধর্ম এমনকি রাজনীতির ক্ষেত্রেও। ধর্ম যেহেতু সংযমের কথা বলে, তাই ধর্মকে আক্রমণ করা হবে। যৌন সংযমের নৈতিকতাকে দেখা হবে পশ্চাৎপদ, অবৈজ্ঞানিক, অনৈতিক, নির্বুদ্ধিতা, কিংবা জঘন্য ধ্যানধারণা হিসেবে। [পৃষ্ঠা:৪৪]
নৈতিকতা ক্রমশ যৌনতাকেন্দ্রিক হয়ে উঠবে। যৌনতা গ্রাস করে নেবে সমাজ ও জীবনের সব অক্ষকে। সমাজের মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা এবং সবশেষে প্রতিষ্ঠান, একে একে ধ্বসে পড়বে সবই। জীবনের ব্যাপারে, পৃথিবীর ব্যাপারে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যাবে। পালটে যাবে সমাজ, বিজ্ঞান এমনকি সৌন্দর্যের ব্যাপারে ধারণাও।[পৃষ্ঠা:১৫] মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞানের মতো শাস্ত্রগুলোকে দখল করে নেবে যৌনতাকেন্দ্রিক দর্শন। এমনকি শিশুদেরও দেওয়া হবে অবাধ যৌনতার শিক্ষা। [পৃষ্ঠা:৫৩]
এক থেকে দুই প্রজন্মের মধ্যে জন্মহার কমতে শুরু করবে। যৌন উন্মাদনায় মগ্ন মানুষ সন্তান জন্ম দেওয়া আর লালনপালনের দায়িত্ব নিতে চাইবে না। গর্ভপাত, জন্মবিরতিকরণ, যৌনরোগসহ নানা কারণে সমাজের জন্মহার কমে যাবে নাটকীয়ভাবে। ইতিহাসে অনেকবার এর দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, এভাবেই লাম্পট্য আর বিকৃতির মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পঞ্চদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন ইউরোপীয় রাজপরিবার। [পৃষ্ঠা:৭৯]
অবাধ যৌনতা নিয়ে আসবে মানসিক আর আধ্যাত্মিক রোগ। সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে নানা রকমের বাতিক, বিকার, আর মানসিক ব্যাধি। ক্রমাগত শরীরী সুখের পেছনে ছুটে চলার জীবন তৈরি করবে অস্থিরতা। একের পর এক নৈতিক স্খলন সেই অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তুলবে। ভোগবাদে মগ্ন হয়ে ক্রমেই অবশ আর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে মানুষ। ভোতা হয়ে আসবে অনুভূতি, ভালো-মন্দের বোধ। সমাজের ওপর চেপে বসবে স্থবিরতা আর আলস্যের চাদর। সৃজনশীলতা আর জীবনীশক্তি উবে যাবে। ক্ষয় হতে থাকবে চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা। শরীরের সুখে মত্ত মানুষ ভরণপোষণের আশা করবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে। [পৃষ্ঠা:৯৫]
অবক্ষয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবার তিন প্রজন্মের মধ্যে পতনের পর্যায়ে পৌঁছে যাবে সমাজ।
تلاش کریں۔
مقبول پوسٹس
-
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ডিজিটাল সেন্টার
کی طرف سے Tawfiqur Rahman -
10 Things That Your Family Taught You About Cribs Beds
کی طرف سے cots4tots9238 -
Цена школьных аттестатов и дипломов в знаменитом интернет-магазине
کی طرف سے sonnick84 -
Купить диплом техникума.
کی طرف سے curtismiller07 -
7 Helpful Tips To Make The Most Of Your Pragmatic Slots Return Rate
کی طرف سے pragmaticplay3248